বুধবার ১২ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

সমাজের সব ক্ষেত্রে আসুক সমতা

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   শনিবার, ০৮ মার্চ ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   167 বার পঠিত

সমাজের সব ক্ষেত্রে আসুক সমতা

আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এবার নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সমতা ক্ষমতায়ন অধিকার: নারী কন্যা সবার।’ স্লোগানটি সমাজে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং নারীদের প্রতি ন্যায় ও সমতার ভিত্তিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তাকে সামনে নিয়ে এসেছে।

সামগ্রিকভাবে দারিদ্র্য দূরীকরণ, জেন্ডারকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, সবুজ অর্থনীতি ও যত্নশীল সমাজ গঠন, নারীবাদী সংগঠনগুলোকে শক্তিশালী করা এবং সর্বোপরি সর্বত্র নারীর উপস্থিতিকে দৃঢ় করতে নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। উদ্বেগের বিষয় হলো যুদ্ধ, সংঘর্ষ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোকে নারীর সেবা খাতে যেখানে বৈশ্বিক সহায়তা কমে আসছে, সেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী ইউএসএআইডির প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে নারীর উন্নয়নে আর্থিক সহায়তা আরও কমে যাবে।

বৈশ্বিক পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশের দিকে তাকালে দেখতে পাই, নানাবিধ বাধা পেরিয়ে বাংলাদেশের নারীরা সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন। সন্তান, সম্পদের সুরক্ষা তো বটেই; দুর্যোগের ঝুঁকি মোকাবিলায় তঁাদের অবদান সারা বিশ্বে স্বীকৃত। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, মানবসম্পদ উন্নয়নেও নারীর অবদান উল্লেখযোগ্য। গড় আয়ুতে নারী অনেক আগেই পুরুষকে ছাড়িয়ে গেছেন।

আমাদের সংবিধান নারী–পুরুষনির্বিশেষে পাঁচ মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে। এই সংবিধানে জাতি, ধর্ম, বর্ণনির্বিশেষে সমানাধিকার নিশ্চিতের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও নারীর প্রতি বৈষম্য ঘোচেনি। ইউনিসেফের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের মেয়েরা অপুষ্টির দুষ্টচক্রে আটকা পড়েছে।

নারীরা দেশের পোশাক খাতে বিপ্লবের সূচনা করেছেন। অথচ গবেষণা বলছে, অঞ্চলভেদে দেশে নারী পোশাকশ্রমিকদের মজুরিতে ৫১ থেকে ৬০ শতাংশ বৈষম্য বিরাজমান। এটি খুবই উদ্বেগের বিষয়। হাসপাতালগুলোয় নারীদের আসনসংখ্যা এখনো পুরুষের সমান করা যায়নি। প্রশাসনে নারীদের সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে তঁাদের অংশগ্রহণ সীমিত।

এখনো নারীদের জন্য নিরাপদ শৌচাগারের ব্যবস্থা নেই, ট্রেনে-বাসে নারী ও কন্যাশিশুরা ধর্ষণ ও নিগ্রহের শিকার হয়। বাড়ি থেকে বের হয়ে স্কুল-কলেজ বা কর্মস্থলে যেতে গণপরিবহনে আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়। বাল্যবিবাহের দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান সারা বিশ্বে অষ্টম এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম।

গবেষণা, সমীক্ষা আর সূচকে দেশে নারীর প্রতি বৈষম্যের যে ছবি, তা বেদনাদায়ক। আমরা মনে করি, নারীর সম-অধিকার প্রতিদিনের ইস্যু, জরুরি ইস্যু। শুধু ৮ মার্চ নারীর প্রতি সমানুভূতি না দেখিয়ে, বছরের বাকি ৩৬৪ দিনও জেন্ডার সমতার কথা মাথায় রেখে কাজ করতে হবে।

২০২৪ সালের ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে নারীরা অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একাধিকবার আন্তর্জাতিক শিরোপা জিতেছেন নারী ফুটবলাররা। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, নারী খেলোয়াড়দের প্রতি রাষ্ট্র বরাবর বৈষম্যমূলক আচরণ করে এসেছে, তাঁদের ন্যায্য মজুরি ও সুযোগ–সুবিধা থেকেও বঞ্চিত রাখা হয়। মাঠ থেকে আবাসস্থল—কোথাও নারী খেলোয়াড়দের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা যায়নি।

কাজী নজরুল ইসলাম যেমন বলেছিলেন, ‘বিশ্বে যা–কিছু মহান সৃষ্টি চির–কল্যাণকর/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ নারী ও পুরুষ উভয়কে নিয়ে আমাদের সমাজ ও বিশ্ব। কাউকে পেছনে রেখে এগিয়ে যাওয়া যাবে না। ২০২৫ সালে এসে, বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়নে যেমন উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আছে, তেমনি সামাজিক বাধাও কম নয়। বিভিন্ন স্থানে নারীদের ফুটবল খেলা ও গান গাওয়ায় বাধা দিচ্ছেন একশ্রেণির মানুষ। পোশাক নিয়েও তাদের হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। রাস্তায়, পরিবহনে চলতে গিয়ে এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চরম বুলিংয়ের শিকার হতে হচ্ছে নারীদের। এসব পেরিয়ে বাংলাদেশের নারী পরিবার, কর্মক্ষেত্রসহ সমাজজীবনের সব ক্ষেত্রে নিজের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করতে সক্ষম হবে, এবারের নারী দিবসে এটাই প্রত্যাশিত।

Facebook Comments Box

Posted ৪:০৬ পিএম | শনিবার, ০৮ মার্চ ২০২৫

|

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

ইউএসএ থেকে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ এবং তথ্যে আপনার প্রয়োজন মেটাতে

NSM Moyeenul Hasan Sajal

Editor & Publisher
Phone: +1(347)6598410
Email: protidinkar@gmail.com, editor@protidinkar.com

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।